পরিচিতি: ক্লাব বিশ্বকাপ ও পিএসজির আধিপত্য
বিশ্ব ফুটবলের সবচেয়ে মর্যাদাপূর্ণ প্রতিযোগিতাগুলোর একটি ক্লাব বিশ্বকাপ। এই আসরে প্রতিটি মহাদেশের সেরা ক্লাবগুলো মুখোমুখি হয় বিশ্বসেরার মুকুটের জন্য। তবে এবারের টুর্নামেন্টে সব আলো এক জায়গাতেই—প্যারিস সাঁ জারমাঁ বা পিএসজির দিকে। লুইস এনরিকের নেতৃত্বে পিএসজি শুধু শিরোপার দ্বারপ্রান্তেই নয়, তারা এখন বিশ্বসেরা ক্লাব হিসেবেও স্বীকৃতি পেয়েছে।
অপ্টা পাওয়ার র্যাঙ্কিংয়ের সর্বশেষ তালিকায় পিএসজি উঠে এসেছে এক নম্বরে। শুধু র্যাঙ্কিংয়েই নয়, মাঠের পারফরম্যান্সেও পিএসজি বুঝিয়ে দিয়েছে, কেন তারা সেরা।
রিয়ালকে উড়িয়ে দিয়ে ফাইনালে পিএসজি
সেমিফাইনালে রিয়াল মাদ্রিদের বিপক্ষে ৪–০ গোলে জয়ই যেন এই দাবিকে আরও শক্ত ভিত্তি দিয়েছে। ইউরোপিয়ান চ্যাম্পিয়নশিপে ১৫ বার শিরোপাজয়ী রিয়াল এই ম্যাচে যেন নামেই দল। উসমান দেম্বেলে, কাভারাস্কেইয়া, হাকিমি, মেন্দেসদের তোপে নাকাল হয়ে মাঠ ছাড়ে রিয়াল।
এই জয়ে শুধু একটি ম্যাচ নয়, বরং গোটা টুর্নামেন্টেই আধিপত্য প্রতিষ্ঠা করে এনরিকের দল। এটিকে কেবল জয় নয়, বিশ্ব ফুটবলে শক্ত বার্তা বলেই বিবেচনা করছেন বিশ্লেষকেরা।
পিএসজির উত্থান: অতীতের ব্যর্থতা থেকে বর্তমানের শ্রেষ্ঠত্ব
এক সময় নেইমার, এমবাপ্পে ও মেসির মতো তিন মহাতারকাকে নিয়ে গড়া দলও চ্যাম্পিয়নস লিগ জিততে পারেনি পিএসজি। সাফল্যের তৃষ্ণা নিয়ে তারা প্রতিবারই ফিরেছে হতাশ হয়ে।
কিন্তু সেই সময়ের ব্যর্থতা আজ অতীত। ২০২4–25 মৌসুমে চ্যাম্পিয়নস লিগ জিতে ইতিহাস গড়েছে পিএসজি। এরপর ক্লাব বিশ্বকাপে একের পর এক প্রতিপক্ষকে উড়িয়ে দিয়ে এখন ফাইনালে, যেখানে তারা মুখোমুখি হবে ইংলিশ ক্লাব চেলসির।
এনরিকের জাদু: তারকাবিহীন দলেও বাজিমাত
পিএসজির এই পরিবর্তনের মূল কারিগর লুইস এনরিকে। বড় তারকারা দল ছাড়লেও এনরিকে আত্মবিশ্বাস হারাননি। বরং, দলীয় রসায়নকে কাজে লাগিয়ে গড়েছেন এক শক্তিশালী ইউনিট।
দেম্বেলে, হাকিমি, কাভারাস্কেইয়া, মেন্দেস—এদের সমন্বয়ে গড়ে তোলা পিএসজি এবার ফুটবল বিশ্বকে দেখিয়েছে, শুধুই তারকাবহুল দল নয়, ঐক্যবদ্ধ দলই জয়ের আসল চাবিকাঠি।
ক্লাব বিশ্বকাপে পিএসজির যাত্রা
| পর্ব | প্রতিপক্ষ | ফলাফল |
|---|---|---|
| প্রথম ম্যাচ | আতলেতিকো মাদ্রিদ | ৪–০ জয় |
| দ্বিতীয় ম্যাচ | বোতাফোগো (ব্রাজিল) | ১–২ পরাজয় |
| শেষ ষোলো | ইন্টার মায়ামি | ৪–০ জয় |
| কোয়ার্টার ফাইনাল | বায়ার্ন মিউনিখ | ২–০ জয় |
| সেমিফাইনাল | রিয়াল মাদ্রিদ | ৪–০ জয় |
এতটাই দাপট দেখিয়েছে এনরিকের দল যে বোতাফোগোর বিপক্ষে হারকেও ব্যতিক্রম বা ‘অঘটন’ হিসেবে ধরা হচ্ছে।
অপ্টা পাওয়ার র্যাঙ্কিং: কোথায় কে দাঁড়িয়ে
ক্লাব বিশ্বকাপের সেমিফাইনাল শেষে অপ্টা পাওয়ার র্যাঙ্কিংয়ের তালিকায় শীর্ষস্থানে উঠে এসেছে পিএসজি। তাদের পরেই আছে লিভারপুল ও আর্সেনাল।
| র্যাঙ্ক | ক্লাব | দেশ |
|---|---|---|
| ১ | পিএসজি | ফ্রান্স |
| ২ | লিভারপুল | ইংল্যান্ড |
| ৩ | আর্সেনাল | ইংল্যান্ড |
| ৪ | ম্যানচেস্টার সিটি | ইংল্যান্ড |
| ৫ | বার্সেলোনা | স্পেন |
| ৬ | রিয়াল মাদ্রিদ | স্পেন |
| ৭ | বায়ার্ন মিউনিখ | জার্মানি |
| ৮ | চেলসি | ইংল্যান্ড |
বার্সা ও রিয়ালের মতো ক্লাবগুলো যেখানে শীর্ষ চারের বাইরে, সেখানে পিএসজির এক নম্বরে উঠে আসা বিশ্ব ফুটবলের ভারসাম্যে এক বড় পরিবর্তনের ইঙ্গিত দেয়।
আরও পড়ুন
দলগত ঐক্যের জয়
পিএসজির সাফল্য মূলত এসেছে দলগত নৈপুণ্য থেকে। একটি দল কতটা শক্তিশালী হতে পারে যদি সবার মাঝে থাকে বোঝাপড়া, লক্ষ্য, ও নেতৃত্বের সমন্বয়—তার নিখুঁত উদাহরণ লুইস এনরিকের পিএসজি।
এটি নিছকই একটি মৌসুমের গল্প নয়, বরং এটি হতে পারে একটি নতুন যুগের সূচনা—যেখানে ইউরোপীয় ফুটবলে পিএসজি যুগ শুরু হতে চলেছে।
শেষ কথা: চেলসির বিপক্ষে ফাইনাল ও ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা
ফাইনালে চেলসির বিপক্ষে লড়াইয়ে নামবে পিএসজি। যদিও ম্যাচের ফলাফল যাই হোক না কেন, অপ্টা র্যাঙ্কিংয়ের শীর্ষস্থান তাদের হাতেই থাকছে।
তবে পিএসজি এখন শুধু ক্লাব নয়—একটি ফুটবলীয় দৃষ্টান্ত। পরিশ্রম, কৌশল, ঐক্য ও নেতৃত্বের নিখুঁত সমন্বয়ে কীভাবে একটি দল ইতিহাস গড়তে পারে, সেটাই প্রমাণ করেছে তারা।