বিশ্ব ফুটবলের ইতিহাসে অন্যতম সফল ও জনপ্রিয় জুটি হিসেবে বিবেচিত হন লিওনেল মেসি-সুয়ারেজ । বার্সেলোনা অধ্যায়ে তাঁদের বন্ধুত্ব, মাঠের পারফরম্যান্স এবং পারস্পরিক বোঝাপড়া নিয়ে আলোচনার শেষ নেই।
ফুটবল মাঠে এই জুটির প্রতিপক্ষের জন্য ছিলেন এক আতঙ্কের নাম। কিন্তু এবার তাঁরা একসঙ্গে মাঠ নয়, নামছেন নতুন এক মঞ্চে—ব্যবসা জগতে। উরুগুয়ের ফুটবলে নতুন এক ক্লাব গড়ে তুলেছেন সুয়ারেজ, আর সেই ক্লাবে এখন যুক্ত হয়েছেন তাঁর জীব-long বন্ধু মেসি। এই নতুন উদ্যোগের নাম ‘দেপোর্তিভো এলএসএম’, যেখানে ‘এলএসএম’ বোঝায়—লুইস, সুয়ারেজ ও মেসি।
বন্ধুত্ব থেকে ব্যবসায়িক অংশীদারিত্ব
মেসি ও সুয়ারেজের বন্ধুত্বের শুরু হয়েছিল বার্সেলোনায়। ২০১৪ সাল থেকে ২০২০ পর্যন্ত তাঁরা একসঙ্গে খেলেছেন, জিতেছেন একাধিক লা লিগা, কোপা দেল রে, উয়েফা চ্যাম্পিয়ন্স লিগ সহ অনেক শিরোপা। ফুটবল মাঠে তাঁদের বোঝাপড়ার প্রশংসা করেছেন বিশ্বের সব কোচ ও বিশ্লেষক। সেই বন্ধুত্ব এখন রূপ নিচ্ছে ব্যবসায়িক অংশীদারিত্বে।
সম্প্রতি উরুগুয়ের রাজধানী মন্টেভিডিওর উপকণ্ঠ সিউদাদ দে লা কস্তায় ‘দেপোর্তিভো এলএসএম’ নামের একটি নতুন ফুটবল ক্লাব গড়েছেন সুয়ারেজ। ক্লাবটি উরুগুয়ের চতুর্থ বিভাগের একটি দল হিসেবে যাত্রা শুরু করবে। তবে এই ক্লাবের বিশেষত্ব হলো, এটি শুধু একটি দল নয়—এটি একটি স্বপ্ন, একটি সামাজিক উদ্যোগ, যেখানে ভবিষ্যতের ফুটবল প্রতিভাদের গড়ে তোলার লক্ষ্যে বিনিয়োগ করা হচ্ছে।
মেসির অংশগ্রহণ: শুধু নাম নয়, সক্রিয় ভূমিকাও
ক্লাবটির প্রতিষ্ঠাতা সুয়ারেজ হলেও এর অন্যতম মুখ হয়ে উঠেছেন লিওনেল মেসি। ক্লাবের এক ভিডিও বার্তায় সুয়ারেজের পাশে বসে মেসি বলেন, “আমি গর্বিত যে তুমি আমাকে বেছে নিয়েছ। সামনে এগিয়ে যেতে এবং সবচেয়ে বড় কথা, এই উদ্যোগে তোমার পাশে থাকতে আমি সবকিছু দিয়ে সাহায্য করতে চাই।”
মেসি ক্লাবটির অংশীদার হয়েছেন এবং জানা গেছে, তিনি শুধু বিনিয়োগকারী হিসেবেই নন, ক্লাবের কৌশলগত সিদ্ধান্ত, যুব একাডেমি পরিচালনা ও আন্তর্জাতিক যোগাযোগ স্থাপনেও ভূমিকা রাখবেন। তাঁর অভিজ্ঞতা ও পরিচিতি দেপোর্তিভো এলএসএম-কে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে তুলে ধরতে সাহায্য করবে বলেই ধারণা।
আরও পড়ুন
ক্লাব বিশ্বকাপে মেসি–রোনালদো র এক দলে খেলার সম্ভাবনা দেখেন ফিফা সভাপতি
ক্লাব অবকাঠামো: আধুনিক সুযোগ-সুবিধায় গড়ে উঠছে
দেপোর্তিভো এলএসএম ক্লাবটি গড়ে তোলা হয়েছে প্রায় ২০ একর জায়গা জুড়ে। সেখানে একটি ১,৪০০ আসনের আধুনিক স্টেডিয়াম, সিনথেটিক টার্ফসহ অত্যাধুনিক প্রশিক্ষণ সুবিধা রয়েছে। ক্লাবটিতে ৮০ জনের বেশি কর্মী ইতিমধ্যেই নিয়োজিত রয়েছেন, যারা প্রতিদিনের অপারেশন, কোচিং, ফিজিওথেরাপি, মিডিয়া পরিচালনা ও ব্যবস্থাপনা দেখাশোনা করছেন।
এছাড়া ক্লাবটির ইনস্টাগ্রাম হ্যান্ডল চালু হওয়ার পর প্রথম ২ ঘণ্টায় ৪০ হাজার ফলোয়ার যুক্ত হয়, যা পরে বেড়ে দাঁড়ায় প্রায় ৩ লাখে। এটি প্রমাণ করে যে, শুধু উরুগুয়ে নয়, সারা বিশ্ব থেকে মানুষ এই ক্লাবের কার্যক্রম নিয়ে আগ্রহী।
সামাজিক দায়বদ্ধতা ও উদ্দেশ্য
এই ক্লাবের প্রধান উদ্দেশ্য শুধু পেশাদার ফুটবলে অংশগ্রহণ নয়, বরং এটি একটি সামাজিক প্রকল্প হিসেবে কাজ করবে। উরুগুয়ের নিম্নবিত্ত ও সুবিধাবঞ্চিত এলাকায় থাকা প্রতিভাবান তরুণদের খুঁজে বের করে তাঁদের প্রশিক্ষণ, শিক্ষাদান ও স্বাস্থ্যসেবার সুযোগ দেওয়াই ক্লাবটির অন্যতম লক্ষ্য।
সুয়ারেজ বলেন, “এই ক্লাব আমার স্বপ্ন, ২০১৮ সাল থেকে যা মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছিল। আমি এমন কিছু করতে চেয়েছি যেটা সমাজে পরিবর্তন আনতে পারে।”
মেসিও তাঁর বার্তায় জানিয়েছেন, তরুণদের জন্য একটি শক্তিশালী ভিত্তি গড়ে দেওয়ার বিষয়টি তাঁদের অন্যতম অগ্রাধিকার।
রেকোবা: অভিজ্ঞ কোচের অধীনে শুরু
ক্লাবটির প্রধান কোচ হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন উরুগুয়ের সাবেক ফুটবলার ও ইন্টার মিলানের কিংবদন্তি আলভারো রেকোবা। তাঁর অভিজ্ঞতা ও ফুটবল বোঝাপড়া দিয়ে ক্লাবটির প্রাথমিক দলকে গড়ে তোলা হবে। রেকোবার অধীনে তরুণ খেলোয়াড়রা কৌশলগতভাবে উন্নত প্রশিক্ষণ পাবেন এবং ভবিষ্যতের জন্য প্রস্তুত হবেন।
মেসি–সুয়ারেজ: মাঠ ও মাঠের বাইরের সেরা জুটি
বর্তমানে মেসি ও সুয়ারেজ মেজর লিগ সকারে ইন্টার মায়ামির হয়ে খেলছেন। তাঁদের চুক্তি ২০২৫ পর্যন্ত থাকলেও গুঞ্জন রয়েছে, তাঁরা শিগগিরই চুক্তি নবায়ন করবেন।
মাঠে যেমন তাঁরা একে অপরকে বুঝতে ভুল করেন না, তেমনি মাঠের বাইরেও একে অপরের প্রতি তাঁদের আস্থা অনন্য। এই আস্থাই এখন রূপ নিচ্ছে এক নতুন ভিন্ন মঞ্চে—যেখানে লক্ষ্য শুধু ট্রফি নয়, একটি সামাজিক পরিবর্তন, একটি ভবিষ্যৎ প্রজন্মের স্বপ্ন পূরণ।
উরুগুয়ের ফুটবলে নতুন যুগের সূচনা?
উরুগুয়ে বরাবরই বিশ্বমানের ফুটবলার উপহার দিয়েছে—ডিয়েগো ফোরলান, এডিনসন কাভানি, লুইস সুয়ারেজ প্রমুখ। কিন্তু স্থানীয় ফুটবলের অবকাঠামো ও সুযোগ-সুবিধা নিয়ে দীর্ঘদিন ধরেই রয়েছে অসন্তোষ। দেপোর্তিভো এলএসএম-এর মতো একটি আধুনিক ও সংগঠিত ক্লাবের আগমন হয়তো এই চিত্র বদলে দিতে পারে। মেসি–সুয়ারেজের এই উদ্যোগ অন্য তারকা ফুটবলারদেরও উৎসাহিত করতে পারে তাঁদের নিজ দেশে বিনিয়োগে আগ্রহী হতে।
লিওনেল মেসি ও লুইস সুয়ারেজ—এই দুই নাম ফুটবল প্রেমীদের হৃদয়ে একটি আবেগের নাম। তাঁদের বন্ধুত্ব, একসঙ্গে খেলার সাফল্য, ও পারস্পরিক শ্রদ্ধার দৃষ্টান্ত এখন পরিণত হয়েছে একটি সামাজিক উদ্যোগে। দেপোর্তিভো এলএসএম শুধুমাত্র একটি ফুটবল ক্লাব নয়, এটি একটি আশা, একটি স্বপ্ন, একটি ভবিষ্যতের নির্মাণ। মাঠের তারকা মেসি-সুয়ারেজ এবার মাঠের বাইরেও দেখাবেন তাঁদের অসাধারণ দক্ষতা ও নেতৃত্ব।
2 thoughts on “এবার দেখা যাবে ‘ব্যবসায়ী’ মেসি–সুয়ারেজ জুটিকে”