রিয়াল মাদ্রিদ ও প্যারিস সেন্ট জার্মেইর (পিএসজি) মধ্যকার ক্লাব বিশ্বকাপের সেমিফাইনাল ম্যাচ ঘিরে উত্তেজনার পারদ চড়ছে দ্রুত। একদিকে ফিট হয়ে ফিরেছেন কিলিয়ান এমবাপ্পে, অন্যদিকে দুর্দান্ত ফর্মে রয়েছেন গনসালো গার্সিয়া। আর এ পরিস্থিতিতে রিয়ালের কোচ জাবি আলোনসোর জন্য সবচেয়ে বড় প্রশ্ন—শুরুর একাদশে জায়গা পাবেন কে? এমবাপ্পে, গার্সিয়া, নাকি ভিনিসিয়ুস জুনিয়র?
গার্সিয়ার উত্থান: শূন্যতা থেকেই সুযোগ
ক্লাব বিশ্বকাপে রিয়ালের নতুন বিস্ময় হিসেবে আবির্ভূত হয়েছেন গনসালো গার্সিয়া। এমবাপ্পের চোটে যে শূন্যতা তৈরি হয়েছিল, সেটিই যেন আশীর্বাদ হয়ে এসেছিল গার্সিয়ার জন্য। গ্রুপ পর্বে তিনটি ম্যাচে অংশ নিয়ে দুই গোল ও এক অ্যাসিস্ট করেছেন তরুণ এই স্প্যানিশ ফরোয়ার্ড। পুরো টুর্নামেন্টে এখন পর্যন্ত তাঁর নামের পাশে রয়েছে ৫ ম্যাচে ৪ গোল ও ১ অ্যাসিস্ট।
এই পারফরম্যান্স তাকে শুধু রিয়াল ভক্তদের নয়, ফুটবল বিশ্লেষকদেরও মন জয় করে নিয়েছে। ফর্মে থাকা এমন একজন ফুটবলারকে হঠাৎ করেই বেঞ্চে পাঠানো কোনোভাবেই যুক্তিসঙ্গত মনে হচ্ছে না।
এমবাপ্পের প্রত্যাবর্তন: ধীরে ধীরে ছন্দে ফেরার চেষ্টা
চোটের কারণে গ্রুপ পর্বে মাঠের বাইরে ছিলেন কিলিয়ান এমবাপ্পে। তবে শেষ ষোলোতে জুভেন্টাসের বিপক্ষে বদলি হিসেবে মাঠে নামেন তিনি এবং ২২ মিনিটের জন্য খেলে ধীরে ধীরে নিজের ফর্মে ফেরার ইঙ্গিত দেন। এরপর কোয়ার্টার ফাইনালে বরুসিয়া ডর্টমুন্ডের বিপক্ষে মাঠে নামেন ২৩ মিনিট এবং গুরুত্বপূর্ণ সময়ে দারুণ এক গোল করেন।
এখন সেমিফাইনালে নিজের সাবেক ক্লাব পিএসজির বিপক্ষে মাঠে নামতে পুরোপুরি প্রস্তুত এই ফরাসি ফরোয়ার্ড। কিন্তু তাকে শুরুর একাদশে রাখলে বেঞ্চে পাঠাতে হবে আরেকজনকে—এখানেই মূল সমস্যার সৃষ্টি।
মিয়াতোভিচের বিতর্কিত পরামর্শ
রিয়ালের সাবেক তারকা প্রেদরাগ মিয়াতোভিচ বিষয়টি নিয়ে তাঁর মতামত দিয়েছেন খোলাখুলিভাবেই। তাঁর মতে, গার্সিয়া ও এমবাপ্পেকে একসঙ্গে মাঠে রাখার জন্য ভিনিসিয়ুসকে বেঞ্চে পাঠানো উচিত।
তিনি বলেন,
“গনসালো দুর্দান্ত ফর্মে আছে এবং এমবাপ্পে সুস্থ। এই মুহূর্তে ভিনিসিয়ুসকে বাইরে রাখাটাই যুক্তিসঙ্গত হবে।”
মিয়াতোভিচের এই মন্তব্য সোশ্যাল মিডিয়াতে ভক্তদের মধ্যে আলোচনার ঝড় তুলেছে। কেউ সমর্থন করছেন, কেউ আবার প্রশ্ন তুলেছেন, “বড় ম্যাচের অভিজ্ঞতা কি তবে আর মূল্যহীন?”
ভিনিসিয়ুস: বড় ম্যাচের খেলোয়াড়
বিশ্বকাপে ভিনিসিয়ুস জুনিয়রের পারফরম্যান্স খুব একটা উজ্জ্বল না হলেও, তাঁকে বাদ দেওয়ার সিদ্ধান্ত সহজ নয়। কারণ, ভিনি হলো সেই ধরনের খেলোয়াড়, যিনি বড় ম্যাচে হঠাৎই একা সবকিছু বদলে দিতে পারেন। তাঁর গতি, ড্রিবলিং আর প্রতিপক্ষের ডিফেন্স ভাঙার দক্ষতা রিয়ালের আক্রমণে সবসময় ভিন্ন মাত্রা যোগ করে।
চলতি ক্লাব বিশ্বকাপে একটি গোল ও একটি অ্যাসিস্ট থাকলেও, কোচ আলোনসো জানেন বড় ম্যাচে ভিনিসিয়ুস কতটা কার্যকর হতে পারেন।
তিনজন একসাথে: সম্ভব কিন্তু ঝুঁকিপূর্ণ
তাহলে কি তিনজনকে একসঙ্গে একাদশে রাখা যেতে পারে?
সাধারণভাবে, গার্সিয়া, এমবাপ্পে ও ভিনিসিয়ুসকে একত্রে খেলানো সম্ভব। তবে এতে করে দলের রক্ষণভাগের ভারসাম্য হুমকির মুখে পড়তে পারে। তিন ফরোয়ার্ড নিয়ে খেললে মাঝমাঠে একজন কম পড়ে যাবে, যা পিএসজির মতো দলকে বাড়তি সুবিধা দিতে পারে।
ফুটবল একটানা ৯০ মিনিটের খেলা। আক্রমণ যেমন গুরুত্বপূর্ণ, তেমনি রক্ষণেও থাকতে হয় পরিকল্পনা। আর এই ভারসাম্য ঠিক রাখতেই হয়তো কাউকে বসাতেই হবে।
আলোনসোর সামনে সমাধানের পথ কী?
জাবি আলোনসোর জন্য সিদ্ধান্ত নেওয়া খুব একটা সহজ নয়। একটি ভুল সিদ্ধান্ত সেমিফাইনালের মতো গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচে দলের ফলাফল পাল্টে দিতে পারে। এজন্য তাকে কেবল ফর্ম নয়, খেলোয়াড়দের মানসিক প্রস্তুতি, ম্যাচ রিদম, প্রতিপক্ষ বিশ্লেষণ, এবং কৌশলগত ভারসাম্য—সবকিছু মাথায় রেখে সিদ্ধান্ত নিতে হবে।
গার্সিয়ার মতো ফর্মে থাকা খেলোয়াড়কে বাদ দেওয়া অন্যায় হবে, আবার ভিনিসিয়ুসের অভিজ্ঞতাও মূল্যবান। এমবাপ্পে তো দলের সবচেয়ে বড় তারকা। সেক্ষেত্রে আলোনসো যদি শুরুতে গার্সিয়া ও এমবাপ্পেকে মাঠে নামান, তবে দ্বিতীয়ার্ধে ভিনিসিয়ুসকে ব্যবহার করা হতে পারে “সুপার সাব” হিসেবে।
সিদ্ধান্তের আগে গুরুত্ব পাবে ম্যাচ রিডিং
আজকের ম্যাচে আলোনসোর সিদ্ধান্ত নির্ভর করবে মূলত কৌশলগত পরিকল্পনার উপর। যদি তিনি দ্রুত গোলের লক্ষ্যে খেলতে চান, তাহলে আক্রমণাত্মক লাইনআপে তিনজনকেই মাঠে দেখা যেতে পারে। তবে পিএসজির পেসি ফরোয়ার্ডদের ঠেকাতে হলে রক্ষণভাগে আরও সংহতি আনতে হতে পারে, যা হয়তো একজন ফরোয়ার্ডকে বেঞ্চে পাঠানোর যুক্তি এনে দেয়।
সবদিক বিবেচনা করে একথা নিশ্চিতভাবেই বলা যায়—আজকের ম্যাচের একাদশ বেছে নেওয়া রিয়াল কোচ জাবি আলোনসোর জন্য দারুণ চ্যালেঞ্জিং। গনসালো গার্সিয়ার ফর্ম, এমবাপ্পের তারকা পরিচিতি ও ভিনিসিয়ুসের বড় ম্যাচ অভিজ্ঞতার মাঝে ভারসাম্য খোঁজার এই লড়াই শেষ পর্যন্ত মাঠেই ফল দেবে।
ফুটবল ভক্তদের জন্য আজ রাতের ম্যাচ শুধু একটি খেলা নয়, বরং এটি হয়ে উঠবে—”কে বসবে বেঞ্চে?”—এই প্রশ্নের উত্তরের মঞ্চ।
1 thought on “এমবাপ্পে নাকি ভিনিসিয়ুস: পিএসজির বিপক্ষে বেঞ্চে বসবেন কে”