বার্সেলোনা য় আরেক ১৭ বছর বয়সী বিস্ময়বালক মনে করাচ্ছেন ইনিয়েস্তাকে

বার্সেলোনা ফুটবল ক্লাবের ইতিহাসে নতুন তারকাদের আবির্ভাব কোনো নতুন ঘটনা নয়। লা মাসিয়া থেকে উঠে আসা একের পর এক প্রতিভা বিশ্ব ফুটবলে নিজেদের নাম লিখিয়েছে। সর্বশেষ উদাহরণ লামিনে ইয়ামাল, যিনি ১৭ বছর বয়সেই অগণিত সাফল্য অর্জন করেছেন। এবার সেই পথেই পা রাখলেন আরেক তরুণ, পেদ্রো ‘দ্রো’ ফার্নান্দেজ। মাত্র ১৭ বছর বয়সেই বার্সেলোনার হয়ে প্রথম ম্যাচে গোল করে ফুটবল বিশ্বে আলোচনায় উঠে এসেছেন তিনি।

১৭ বছর বয়সী এক বিস্ময় প্রতিভার উত্থান

বয়স মাত্র ১৭, কিন্তু মাঠে তার খেলা দেখে তা বোঝার উপায় নেই। শারীরিকভাবে অন্যান্য খেলোয়াড়দের তুলনায় ছোট হলেও মানসিক দৃঢ়তায় তিনি অনেক এগিয়ে। ওয়ান অন ওয়ান পরিস্থিতিতে, নিখুঁত পাসিং এবং দারুণ ড্রিবলিংয়ে তিনি যেন এক অন্য রকম ফুটবলার। ভিসেল কোবের বিপক্ষে ম্যাচে মাত্র ৮ মিনিটের মধ্যে গোল করে প্রমাণ করলেন, তিনি ভবিষ্যতের বড় তারকা হওয়ার পথে।

লা মাসিয়ার আরেক রত্ন

দ্রোর জন্ম ২০০৮ সালে গ্যালিসিয়ান বাবা ও ফিলিপিনো মায়ের ঘরে, স্পেনের নিগরান শহরে। ছোটবেলা থেকেই ফুটবলে ঝোঁক থাকা এই কিশোর দ্রুতই প্রতিভা দিয়ে নজর কাড়েন। তার দক্ষতার কারণে লা মাসিয়া একাডেমিতে জায়গা পান এবং সেখানেই তার প্রতিভার বিকাশ ঘটে। লা মাসিয়া থেকে উঠে আসা খেলোয়াড়দের ইতিহাস বিশাল, আর এখন সেই তালিকায় যুক্ত হলো দ্রো ফার্নান্দেজের নাম।

প্রথম ম্যাচেই গোল – নতুন ইতিহাসের সূচনা

জাপানি ক্লাব ভিসেল কোবের বিপক্ষে প্রাক্‌–মৌসুম ম্যাচে হান্সি ফ্লিক ৭৯ মিনিটে মার্কাস রাশফোর্ডের বদলে দ্রোকে মাঠে নামান। মাত্র ৮ মিনিটের মাথায় বক্সের বাইরে থেকে এক দুর্দান্ত শটে গোল করেন তিনি। গোলটি শুধু ম্যাচের ফলাফলকেই প্রভাবিত করেনি, বরং প্রমাণ করেছে – দ্রো বার্সেলোনার ভবিষ্যতের বড় ভরসা হতে যাচ্ছেন।

খেলার ধরনে ইনিয়েস্তার ছায়া

দ্রোর খেলার ধরন অনেকটা আন্দ্রেস ইনিয়েস্তার মতো। মাঠে তার মুভমেন্ট, পাসিংয়ের নিখুঁততা, ওয়ান টাচ প্লে এবং ড্রিবলিংয়ে ইনিয়েস্তার প্রভাব স্পষ্ট। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, সময়ের সাথে সাথে তিনি স্পেন ও বার্সেলোনার হয়ে বড় তারকা হয়ে উঠতে পারেন।

মানসিক পরিপক্বতা ও আত্মবিশ্বাস

দ্রো নিজেই বলেছেন, প্রথম ম্যাচে নামার আগে তিনি কিছুটা স্নায়ুচাপে ভুগছিলেন। কিন্তু সতীর্থদের সমর্থন এবং হান্সি ফ্লিকের সাহস জোগানো তাকে আত্মবিশ্বাসী করেছে। প্রথম সুযোগেই গোল করতে পারা তার জন্য বিশাল প্রেরণা। এমন মানসিক পরিপক্বতা কম বয়সী খেলোয়াড়দের মধ্যে সচরাচর দেখা যায় না।

পজিশনের বৈচিত্র্য – কোচের হাতে এক অস্ত্র

দ্রো মূলত অ্যাটাকিং মিডফিল্ডার হলেও ফরোয়ার্ড, লেফট উইংগার এবং ফলস নাইন হিসেবেও খেলতে সক্ষম। এই বহুমুখী ক্ষমতা তাকে আরও মূল্যবান করে তুলেছে। বার্সেলোনার বর্তমান কোচ হান্সি ফ্লিকও তার বহুমুখীতা দেখে মুগ্ধ।

চুক্তি ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা

বর্তমানে দ্রো বার্সেলোনার সঙ্গে ২০২৭ সালের জুন পর্যন্ত চুক্তিবদ্ধ। তবে ক্লাবটি ইতিমধ্যেই তার সঙ্গে নতুন চুক্তির আলোচনা শুরু করেছে। বার্সার পরিকল্পনা স্পষ্ট – যেকোনো মূল্যে দ্রোকে দীর্ঘ সময়ের জন্য দলে রাখা।

✅ ভবিষ্যতের সম্ভাবনা
  • তরুণ বয়সেই মূল দলে খেলা

  • প্রথম ম্যাচেই গোলের কৃতিত্ব

  • বহুমুখী পজিশন প্লেয়ারের ক্ষমতা

  • মানসিক দৃঢ়তা ও খেলার পরিপক্বতা

এই সব কারণেই ফুটবল বিশ্লেষকরা মনে করছেন, দ্রো ফার্নান্দেজ ভবিষ্যতের বড় তারকাদের একজন হতে যাচ্ছেন।

লা মাসিয়া সবসময়ই বিশ্ব ফুটবলে নতুন তারকার জন্ম দিয়েছে। দ্রো ফার্নান্দেজের ক্ষেত্রে ইতিহাস আবারও পুনরাবৃত্তি হতে পারে। ইনিয়েস্তার ছায়া, ইয়ামালের পথচলা এবং নিজস্ব প্রতিভার মিশেলে দ্রো বার্সেলোনার আগামী দিনের মূল ভরসা হয়ে উঠতে চলেছেন। এখন দেখার বিষয়, তিনি কত দ্রুত নিজেকে বিশ্ব ফুটবলে প্রতিষ্ঠিত করতে পারেন।

Leave a Comment