১৩ বছরের এক মহাকাব্যিক অধ্যায় শেষ হলো। রিয়াল মাদ্রিদের হয়ে ৫৯৭টি ম্যাচ, ২৮টি ট্রফি এবং অসংখ্য স্মৃতি—লুকা মদ্রিচ আজ বিদায় নিলেন ক্লাব ফুটবলের ইতিহাসের অন্যতম সফল ক্লাব থেকে। ৩৯ বছর বয়সী এই ক্রোয়াট তারকা ক্লাব বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে পিএসজির কাছে ৪-০ গোলে হারের মধ্য দিয়ে শেষ করলেন রিয়ালের হয়ে নিজের শেষ ম্যাচ।
ক্লাব বিশ্বকাপেই বেদনাময় বিদায়
যেখানে বিদায় হতে পারত ট্রফি জয়ের আনন্দে, সেখানে হলো হতাশাজনক এক পরাজয়ে। ক্লাব বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে পিএসজির কাছে রিয়ালের ৪-০ গোলে হার যেন একটি যুগের ইতি টানার রূপক হয়ে উঠল। ম্যাচ শেষে কোচ জাবি আলোনসো বলেছিলেন, “তার জন্য এটা একটা তিক্ত সমাপ্তি, তবে তিনি ফুটবলের একজন কিংবদন্তি এবং রিয়াল মাদ্রিদ তাকে চিরকাল মনে রাখবে।”
টটেনহ্যাম থেকে রিয়াল—সফলের পথে যাত্রা
২০১২ সালে ইংলিশ ক্লাব টটেনহ্যাম হটস্পার থেকে রিয়াল মাদ্রিদে পাড়ি জমান লুকা মদ্রিচ। অনেকের সন্দেহ ছিল তার জায়গা হবে কি না রিয়ালের মতো তারকাখচিত এক দলে। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে সেই সন্দেহই রূপ নেয় মুগ্ধতায়। মিডফিল্ডে পাস, ভিশন ও ডিক্টেশন দিয়ে মদ্রিচ হয়ে ওঠেন রিয়ালের মস্তিষ্ক।
ট্রফিতে ভরা রাজত্ব
মদ্রিচের রিয়াল মাদ্রিদ অধ্যায় ছিল ট্রফিতে ভরপুর। ক্লাবটির হয়ে তিনি জিতেছেন:
-
🏆 ৬টি উয়েফা চ্যাম্পিয়ন্স লিগ
-
🏆 ৪টি লা লিগা শিরোপা
-
🏆 ২টি কোপা দেল রে
-
🏆 ৫টি ফিফা ক্লাব বিশ্বকাপ
-
🏆 ৪টি উয়েফা সুপার কাপ
-
🏆 ৪টি স্প্যানিশ সুপার কাপ
এই সাফল্যের চূড়ায় ছিল ২০১৮ সালের ব্যালন ডি’অর জয়। মেসি-রোনালদো যুগে যিনি মাঝখানে জায়গা করে নিয়েছিলেন, তিনি লুকা মদ্রিচ।
মাঠে প্রভাব ও পরিসংখ্যান
এই মৌসুমে মূল একাদশে কম জায়গা পেলেও বদলি খেলোয়াড় হিসেবে প্রতিটি ম্যাচে অবদান রাখার চেষ্টা করেছেন মদ্রিচ। লা লিগায় ৩৪ ম্যাচে ২টি গোল এবং ৬টি অ্যাসিস্ট করেছেন তিনি। যদিও এই মৌসুমে বার্সেলোনার কাছে শিরোপা খুইয়ে হতাশ হতে হয়েছে রিয়ালকে। চ্যাম্পিয়ন্স লিগ ও ক্লাব বিশ্বকাপ থেকেও বিদায় নিতে হয়েছে।
মদ্রিচের বক্তব্যে আবেগ
বিদায়ের পর ইনস্টাগ্রামে দেওয়া এক আবেগঘন বার্তায় মদ্রিচ লেখেন,
“সেই মুহূর্তটি এসে গেছে। যে মুহূর্তটি আমি কখনোই আসতে চাইনি, কিন্তু এটাই ফুটবল, এবং জীবনে সবকিছুরই একটা শুরু ও শেষ আছে।”
তিনি আরও বলেন,
“রিয়াল মাদ্রিদের হয়ে খেলাটা ফুটবলার এবং ব্যক্তি হিসেবে আমার জীবনকে বদলে দিয়েছে। ইতিহাসের সেরা ক্লাবের অন্যতম সফল একটি অধ্যায়ের অংশ হতে পেরে আমি গর্বিত।”
এই কথাগুলোই বুঝিয়ে দেয়, কতটা আবেগ জড়িয়ে ছিল এই ক্লাবটির সঙ্গে।
ইতালির পথে—নতুন ঠিকানা এসি মিলান
রিয়াল মাদ্রিদকে বিদায় জানিয়ে লুকা মদ্রিচ এবার পাড়ি জমাচ্ছেন ইতালিতে। এসি মিলানের সঙ্গে এক বছরের চুক্তিতে যোগ দিচ্ছেন তিনি। ক্যারিয়ারের শেষ ধাপে এসেও নতুন চ্যালেঞ্জ নিতে পিছপা হননি এই মিডফিল্ড জাদুকর।
রিয়াল মাদ্রিদের জন্য শূন্যতা
মদ্রিচের বিদায় মানে শুধু একজন মিডফিল্ডারের বিদায় নয়—এটা মানে এক যুগের শেষ। কাসেমিরো, ক্রুস আর মদ্রিচের ত্রয়ী বিশ্ব ফুটবলের ইতিহাসে অন্যতম সেরা মিডফিল্ড ত্রয়ী হিসেবে স্থান করে নিয়েছে বহু আগেই। এখন কেবল স্মৃতি হয়ে থাকবেন তারা।
যদিও কামাভিঙ্গা, ভালভের্দে ও বেলিংহ্যামদের নিয়ে রিয়াল নতুন এক যুগে প্রবেশ করছে, তবুও অভিজ্ঞতা আর নেতৃত্বের জায়গাটিতে মদ্রিচের অনুপস্থিতি অনুভব করবেই ক্লাবটি।
ভবিষ্যতের সম্ভাবনা—কোচিং নাকি ক্লাব দূত?
অনেকেই ভাবছেন, মদ্রিচ কি ফুটবলকে পুরোপুরি বিদায় জানাবেন, নাকি মাঠের বাইরে কোনো ভূমিকায় ফিরবেন রিয়ালে? ভবিষ্যতে হয়তো আমরা তাকে কোচিং স্টাফ বা ক্লাব অ্যাম্বাসেডর হিসেবেও দেখতে পারি। কারণ তার প্রভাব শুধু মাঠে নয়, ড্রেসিংরুমেও ছিল দারুণ ইতিবাচক।
লুকা মদ্রিচের রিয়াল মাদ্রিদ অধ্যায় শেষ হলেও, তার রেখে যাওয়া অবদান চিরকাল থেকে যাবে রিয়াল মাদ্রিদের ইতিহাসে। তার পাস, তার নেতৃত্ব, তার লড়াকু মানসিকতা আজও বহু তরুণ ফুটবলারের অনুপ্রেরণা। এসি মিলানে তার শেষ ফুটবল অধ্যায় কেমন হবে, তা সময়ই বলবে। তবে রিয়াল সমর্থকরা কখনোই ভুলবে না এক নম্বর ১০ নম্বরকে, যার পায়ে লেখা ছিল সাফল্যের গল্প।
এখন ইতালির ইন্টারমিলান এর জয়েন ছিল