বর্তমান ফুটবল বিশ্বে তরুণ প্রতিভাদের মধ্যে অন্যতম উজ্জ্বল নাম লামিনে ইয়ামাল। সদ্য সমাপ্ত মৌসুমে তাঁর পারফরম্যান্সে মুগ্ধ হয়েছেন বার্সেলোনা ভক্তরাও। যদিও ব্যালন ডি’অর জয়ের দৌড়ে তিনি লম্বা সময় ধরে ছিলেন আলোচনায়, শেষদিকে এসে বার্সার চ্যাম্পিয়নস লিগ থেকে বিদায় নেওয়ার পর সেই সম্ভাবনা কমে যায়। তবে নিজের আত্মবিশ্বাস হারাননি ইয়ামাল। তাঁর মতে, আগামী বছরই তিনি হতে পারেন বিশ্বসেরা খেলোয়াড়। এক সাক্ষাৎকারে এই তরুণ ফুটবলার তুলে ধরেছেন নিজের লক্ষ্য, ভাবনা এবং ফুটবল দর্শন।
চ্যাম্পিয়নস লিগ থেকে ছিটকে যাওয়ার হতাশা
বার্সেলোনা ক্লাব এই মৌসুমে অনেকটাই নতুন করে দল গুছিয়েছিল। ইয়ামাল ছিলেন এই প্রকল্পের গুরুত্বপূর্ণ অংশ। চ্যাম্পিয়নস লিগে বার্সার পারফরম্যান্স ছিল ভালো, কিন্তু শেষ পর্যন্ত সেমিফাইনালেই থেমে যায় তাদের স্বপ্ন। এই ব্যর্থতা ব্যালন ডি’অরের দৌড়ে ইয়ামালের সম্ভাবনায় বড় ধাক্কা দেয়। কারণ, এই ট্রফির জন্য ব্যক্তিগত পারফরম্যান্স ছাড়াও দলীয় সাফল্য বড় ভূমিকা রাখে।
ইয়ামালের স্বপ্ন: বিশ্বকাপ ও চ্যাম্পিয়নস লিগ জয়
স্প্যানিশ সংবাদমাধ্যম ‘এল পার্তিদাসো দে কোপে’-কে দেওয়া সাক্ষাৎকারে ইয়ামাল বলেছেন, “যদি আগামী বছর আমি বিশ্বকাপ এবং চ্যাম্পিয়নস লিগ জিততে পারি, তবে এরপর ব্যালন ডি’অরও আসবে।” এই কথার মাধ্যমে স্পষ্ট বোঝা যায়, ইয়ামাল জানেন কিভাবে একজন ফুটবলার বিশ্বসেরার আসনে পৌঁছাতে পারেন। তিনি শুধু নিজের উন্নতির কথা ভাবছেন না, বরং স্পেন এবং বার্সেলোনার সফলতার দিকেও লক্ষ্য রাখছেন।
এই বক্তব্য অনুযায়ী, যদি সত্যিই ইয়ামাল বিশ্বকাপ ও চ্যাম্পিয়নস লিগ জিততে পারেন, তাহলে তিনিই হবেন ব্যালন ডি’অরের সবচেয়ে বড় দাবিদার। তবে সেটা সহজ কাজ নয়। তার জন্য স্পেন এবং বার্সেলোনাকে দলগতভাবে দুর্দান্ত পারফরম্যান্স করতে হবে এবং ইয়ামালকে রাখতে হবে গুরুত্বপূর্ণ অবদান।
ব্যক্তিগত অর্জনের চেয়ে দলীয় সাফল্যই বড়
ইয়ামাল ব্যালন ডি’অরকে ব্যক্তিগত লক্ষ্য হিসেবে না দেখলেও, এটা স্পষ্ট যে তিনি জানেন এই স্বীকৃতি পাওয়ার জন্য কী কী করা দরকার। তিনি বলেছেন, “আমি ব্যালন ডি’অর নিয়ে ভাবি না। আমার মনে হয় শুধু এটা নিয়ে ভাবাটা বাজে ব্যাপার। আমি শুধু খেলা এবং জেতা নিয়েই ভাবি।” এই বক্তব্য থেকেই বোঝা যায়, ইয়ামাল নিজের দায়িত্ব, উন্নতি ও লক্ষ্য নিয়ে কতটা সচেতন।
এই মানসিকতা একজন সত্যিকারের পেশাদার ক্রীড়াবিদের প্রতিচ্ছবি। আজকের দিনে যখন অনেক তরুণ খেলোয়াড় শুধুই ব্যক্তিগত খ্যাতি আর পুরস্কারের পেছনে ছোটেন, সেখানে ইয়ামালের মতো মনোভাব ফুটবলপ্রেমীদের জন্য এক অনুপ্রেরণা।
আরও পড়ুন
পছন্দের একাদশ: ভবিষ্যতের ফুটবল দর্শন
সাক্ষাৎকারে শুধু ব্যালন ডি’অর নিয়েই নয়, বরং নিজের পছন্দের খেলোয়াড় নিয়েও খোলামেলা কথা বলেছেন ইয়ামাল। চ্যাম্পিয়নস লিগে বিভিন্ন পজিশনে নিজের পছন্দের খেলোয়াড় বেছে নিয়েছেন তিনি।
- পছন্দের কোচ: পিএসজির হয়ে সফলতা পাওয়া লুইস এনরিকে
- সেরা গোলরক্ষক: পিএসজির জিয়ানলুইজি দোন্নারুম্মা
- সেরা ডিফেন্ডার: পিএসজির উইলিয়ান পাঞ্চি
- সেরা মিডফিল্ডার: সতীর্থ পেদ্রি
- সেরা ফরোয়ার্ড: পিএসজির ভিতিনিয়া
এই তালিকা দেখলেই বোঝা যায়, ইয়ামাল কেবল নিজের দলকেই প্রাধান্য দিচ্ছেন না, বরং প্রতিদ্বন্দ্বী দলগুলোর সেরাদের স্বীকৃতি দিতেও পিছপা নন। পাশাপাশি পেদ্রির মতো সতীর্থকে নিজের পছন্দের মিডফিল্ডার হিসেবে বেছে নেওয়া তার দলীয় বন্ধন এবং সহানুভূতিরও পরিচয়।
ইয়ামাল কি পারবেন ইতিহাস গড়তে?
ইতিহাস ঘেঁটে দেখলে দেখা যায়, তরুণ বয়সে ব্যালন ডি’অর জেতা খেলোয়াড়ের সংখ্যা খুবই কম। ইয়ামালের বয়স মাত্র ১৭, কিন্তু তিনি ইতোমধ্যেই ফুটবলবিশ্বের নজর কেড়েছেন। মেসি, রোনালদোর পরবর্তী প্রজন্মের সেরা তারকাদের মধ্যে তিনি অন্যতম।
স্পেন জাতীয় দলের হয়ে আগামী বছর যদি ইউরো বা বিশ্বকাপ জিততে পারেন এবং বার্সেলোনাকে চ্যাম্পিয়নস লিগ এনে দিতে পারেন, তাহলে ইয়ামালের সামনে ব্যালন ডি’অরের দরজা খুলে যেতে পারে।
লামিনে ইয়ামাল এখনো কিশোর, কিন্তু তার ফুটবল মনন এবং পেশাদারিত্ব প্রমাণ করে, সে অনেক পরিণত একজন খেলোয়াড়। ব্যালন ডি’অর জয়ের স্বপ্ন তার আছে, কিন্তু সেটা তাকে বিভ্রান্ত করে না। সে জানে, স্বপ্ন পূরণ করতে হলে মাঠে ঘাম ঝরাতে হয়, নিজের সেরাটা দিতে হয়, এবং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ—দলকে জেতাতে হয়।
আগামী মৌসুমে যদি ইয়ামাল তার এই লক্ষ্য বাস্তবে রূপ দিতে পারেন, তাহলে বিশ্ব ফুটবলে আরেকটি নতুন তারকার উত্থান ঘটবে। বার্সেলোনা এবং স্পেন জাতীয় দলের ভক্তদের জন্য এটা হবে এক অনন্য গর্বের মুহূর্ত। আর ফুটবলপ্রেমীদের জন্য? তারা দেখতে পাবেন নতুন যুগের এক সম্ভাব্য রাজপুত্রের উত্থান।