ব্রাজিল দলের কোচ কার্লো আনচেলত্তি: নেইমারসহ বিশ্বকাপ বাছাইয়ের প্রাথমিক স্কোয়াডে চমক

নিশ্চিতভাবেই ব্রাজিল ফুটবলের জন্য এটি এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা। নানা নাটকীয়তা, গুঞ্জন আর অপেক্ষার অবসান ঘটিয়ে অবশেষে কার্লো আনচেলত্তি ব্রাজিল জাতীয় দলের কোচ হিসেবে দায়িত্ব নিতে যাচ্ছেন। ২৬ মে রিও ডি জেনিরোতে আনুষ্ঠানিকভাবে স্কোয়াড ঘোষণা করার মধ্য দিয়েই শুরু হবে তাঁর এই চ্যালেঞ্জিং যাত্রা। এই বিশ্লেষণধর্মী ব্লগে আলোচনা করব, আনচেলত্তির ব্রাজিল অধ্যায়, নেইমারের সম্ভাব্য প্রত্যাবর্তন, ফ্লামেঙ্গোর ছয় তারকা, আনচেলত্তির দৃষ্টিভঙ্গি, এবং আগামী বিশ্বকাপ বাছাই ম্যাচের প্রেক্ষাপট নিয়ে।

আনচেলত্তির নিয়োগ: নতুন দিগন্তের সূচনা

কার্লো আনচেলত্তির ব্রাজিল দলের কোচ হওয়া নিঃসন্দেহে ঐতিহাসিক একটি সিদ্ধান্ত। ইউরোপিয়ান ক্লাব ফুটবলে সফলতার মুকুটে ভরপুর এই ইতালিয়ান কোচ এবার দক্ষিণ আমেরিকার সবচেয়ে ঐতিহ্যবাহী জাতীয় দলকে নেতৃত্ব দেবেন। রিয়াল মাদ্রিদের দায়িত্বে থাকা অবস্থায় তাঁর ব্রাজিল দায়িত্ব নেওয়ার আলোচনা শুরু হয়। অনেক জল্পনা-কল্পনার পর অবশেষে সেটি বাস্তবে রূপ নিচ্ছে।

এই নিয়োগ ব্রাজিলীয় ফুটবলে এক নতুন দৃষ্টিভঙ্গির প্রতিফলন। স্থানীয় কোচদের বাইরে গিয়ে আন্তর্জাতিক মঞ্চে অভিজ্ঞ, শৃঙ্খলাপূর্ণ ও কৌশলগতভাবে প্রজ্ঞাবান একজন কোচকে দায়িত্ব দেওয়ায় বোঝা যায়, ব্রাজিল এবার বিশ্বকাপে নিজেদের হারানো গৌরব ফিরিয়ে আনতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ।

আরো পড়ুন


ফিনালিসিমা ২০২৬: কখন ও কোথায় হবে আর্জেন্টিনা বনাম স্পেনের হাই-ভোল্টেজ ম্যাচ?


নেইমার: ফিরে আসার প্রতীক্ষায় এক সুপারস্টার

ব্রাজিলীয় সংবাদমাধ্যম ‘ও গ্লোবো’ নিশ্চিত করেছে, আনচেলত্তির পাঠানো ৫০ জনের প্রাথমিক স্কোয়াডে আছেন নেইমার। যদিও এখনো চোটের কারণে ক্লাবের হয়েও মাঠে ফিরতে পারেননি, তবে তাঁকে স্কোয়াডে রাখার সিদ্ধান্তই বলে দিচ্ছে, আনচেলত্তির পরিকল্পনায় নেইমার এখনও গুরুত্বপূর্ণ।

নেইমারের ক্যারিয়ার যেন চোট আর প্রত্যাবর্তনের গল্প। মার্চে জাতীয় দলে ডাক পেলেও খেলা হয়নি চোটের কারণে। ১৭ এপ্রিল আবারও মাঠে নামার চেষ্টা করেই চোট পেয়ে কাঁদতে কাঁদতে মাঠ ছাড়েন তিনি। তবে সাম্প্রতিক অনুশীলন ছবি ও ভিডিও দেখে বোঝা যায়, নেইমার নিজের সেরা ফর্মে ফেরার জন্য জোর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।

একজন ফিট নেইমার এখনও বিশ্বের যে কোনো দলের জন্য পার্থক্য গড়ে দিতে পারেন। তাঁর অভিজ্ঞতা, স্কিল এবং খেলার নিয়ন্ত্রণ আনার ক্ষমতা ব্রাজিলের মতো তরুণদলে এক বিশাল সম্পদ হতে পারে।

কার্লো আনচেলত্তি ব্রাজিল কোচ
নেইমারের ফেরার অপেক্ষায় ব্রাজিল । রয়টার্স

ফ্লামেঙ্গোর ছয় তারকা: ঘরোয়া ফুটবলের প্রতিফলন

আনচেলত্তির ৫০ জনের প্রাথমিক তালিকায় সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো ফ্লামেঙ্গোর ছয় খেলোয়াড়ের অন্তর্ভুক্তি। ঘরোয়া ফুটবলকে উপেক্ষা না করে স্থানীয় প্রতিভাদের মূল্যায়ন করাটা আনচেলত্তির ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি প্রকাশ করে।

এই ছয় খেলোয়াড় হলেন:

  • পেদ্রো (স্ট্রাইকার)

  • গেরসন (মিডফিল্ডার)

  • আলেক্স সান্দ্রো (লেফটব্যাক)

  • দানিলো (সেন্টারব্যাক)

  • ওয়েসলি (রাইটব্যাক)

  • লেও ওর্তিজ (সেন্টারব্যাক)

এদের অন্তর্ভুক্তি দেখায় যে আনচেলত্তি শুধুমাত্র ইউরোপভিত্তিক বড় নামের ওপর নির্ভর করছেন না; বরং জাতীয় ফুটবল কাঠামোর গভীরে গিয়ে প্রতিভা খুঁজে বের করার চেষ্টা করছেন। এটি ভবিষ্যতের জন্য ইতিবাচক বার্তা।

২৬ মে: চূড়ান্ত স্কোয়াডে থাকবে চমক?

রোদ্রিগো কায়েতানো এবং টেকনিক্যাল কো-অর্ডিনেটর জুয়ানের সঙ্গে আনচেলত্তি মাদ্রিদে বসেই ৫০ জনের প্রাথমিক স্কোয়াড চূড়ান্ত করেছেন। ধারণা করা হচ্ছে, চূড়ান্ত ২৩ জনের স্কোয়াডে থাকবে বেশ কিছু চমক। তরুণ খেলোয়াড়, ঘরোয়া লিগের পারফরমার বা হয়ত এমন কিছু খেলোয়াড়ের নামও দেখা যেতে পারে যারা ব্রাজিল দলে নিয়মিত নন।

এটা সম্ভব কারণ আনচেলত্তির অতীত রেকর্ড বলছে, তিনি সাহসী সিদ্ধান্ত নিতে ভয় পান না। রিয়াল মাদ্রিদের মতো ক্লাবেও তিনি অনেক তরুণ খেলোয়াড়ের ওপর আস্থা রেখেছেন, যেমন: ভিনিসিয়ুস, কামাভিঙ্গা বা আরডার গুলার।

বিশ্বকাপ বাছাই: প্রথম দুই ম্যাচের পূর্ব প্রস্তুতি

আগামী ৬ জুন ইকুয়েডরের মাঠে এবং ১১ জুন ঘরের মাঠে প্যারাগুয়ের বিপক্ষে ম্যাচ দিয়ে আনচেলত্তির ব্রাজিল অধ্যায়ের সূচনা হবে। এই দুই ম্যাচের আগে ২ জুন থেকে শুরু হবে আনুষ্ঠানিক অনুশীলন ক্যাম্প।

এই দুই ম্যাচে পারফরম্যান্স দেখেই আনচেলত্তির কৌশলগত দৃষ্টিভঙ্গি সম্পর্কে একটা প্রাথমিক ধারণা পাওয়া যাবে। তাঁর দল কিভাবে খেলবে, কোন ফর্মেশনে নামবে, এবং কোন খেলোয়াড়রা মূল একাদশে থাকবেন, তা হবে পরবর্তী বিশ্লেষণের বিষয়।

আনচেলত্তির কৌশলগত দৃষ্টিভঙ্গি

আনচেলত্তি বরাবরই প্র্যাগম্যাটিক কোচ। তিনি দলের শক্তি ও খেলোয়াড়দের সক্ষমতা বুঝেই সিস্টেম তৈরি করেন। ব্রাজিল দলে তাঁর সামনে থাকবে টেকনিক্যালি দক্ষ, গতিময়, কিন্তু কিছুটা অভিজ্ঞতাহীন একটি দল। এখানে নেইমার, মারকুইনহোস, ক্যাসেমিরোদের মতো সিনিয়রদের পাশাপাশি থাকবে রদ্রিগো, ভিনিসিয়ুস, এনদ্রিকের মতো তরুণ তুর্কি।

সম্ভবত তিনি ৪-৩-৩ বা ৪-২-৩-১ ফরমেশন বেছে নেবেন, যেখানে নেইমারকে রাখা যেতে পারে ফ্রি রোলে বা অ্যাটাকিং মিডফিল্ডার হিসেবে। ভিনিসিয়ুস এবং রদ্রিগো দুই উইংয়ে এবং একজন ফিনিশার স্ট্রাইকার (যেমন পেদ্রো বা রিচার্লিসন) থাকতে পারে সামনের তিনে।

উপসংহার

কার্লো আনচেলত্তি ব্রাজিল কোচ দায়িত্ব নেওয়া নিছক একটি কোচিং চুক্তি নয়—এটি ব্রাজিল ফুটবলের একটা রূপান্তরযাত্রার সূচনা। নেইমারের প্রত্যাবর্তন, ফ্লামেঙ্গোর খেলোয়াড়দের ডাক পাওয়া, এবং তরুণদের প্রতি আস্থা—সব মিলিয়ে এটি হতে পারে ব্রাজিলের পুনর্জন্মের সূচনা।

যদি আনচেলত্তি তাঁর অভিজ্ঞতা ও দূরদর্শিতা দিয়ে ব্রাজিলের তারুণ্যনির্ভর শক্তিকে সঠিকভাবে ব্যবহার করতে পারেন, তাহলে ২০২৬ বিশ্বকাপে ব্রাজিল আবারও চ্যাম্পিয়নের দাবিদার হয়ে উঠতে পারে

আপনার কী মত? নেইমারকে ফিট পেলে কি প্রথম একাদশে রাখা উচিত? আনচেলত্তির নিয়োগ ব্রাজিলের জন্য কতটা ফলপ্রসূ হবে বলে মনে করেন? মন্তব্যে জানান।

1 thought on “ব্রাজিল দলের কোচ কার্লো আনচেলত্তি: নেইমারসহ বিশ্বকাপ বাছাইয়ের প্রাথমিক স্কোয়াডে চমক”

Leave a Comment