“৬ বছর পর সেমিতে বার্সা, সামনে ইন্টার মিলান: ইউরোপের সবচেয়ে ট্যাকটিক্যাল ব্যাটল কীভাবে জিততে পারে ফ্লিকের বার্সেলোনা?”

বার্সেলোনার বনাম ইন্টার মিলান নিয়ে একটা ম্যাচ প্রিভিউর কথা বলেছিলাম। সীজনের সবচেয়ে টেন্সড্ ম্যাচ ইন্টার মিলান এর সাথে হতে চলেছে সেটা সকল বার্সা সমর্থকরা অকপটেই স্বীকার করবে। তার উপরে চ্যাম্পিয়ন্স লীগের সেমিফাইনাল এবং ৬ বছর পর বার্সার সেমিতে পদার্পণ। সব মিলিয়ে বার্সার খেলা কেমন হতে পারে, কেমন হওয়া উচিত, ইন্টার মিলান এর প্লেয়িং স্টাইল, স্ট্রেন্থ, ফাঁকফোকড় নিয়ে কিছু কথা, আজকের এই পোস্টে।

 

ইন্টার মিলান, নামটা নিয়ে খুব একটা কথা হয়না ফুটবল পাড়ায়৷ অথচ কয়েক মৌসুম ধরে ইউরোপের বেস্ট টিমদের একটা। ইনজাঘি, মাস্টারক্লাস জব করে যাচ্ছে এই ইন্টার নিয়ে। বর্তমানে ইউরোপের ওয়ান অফ দ্য বেস্ট ডিফেন্স লাইন, কমপ্যাক্ট মিডফিল্ড সাথে বার্স্টিং ফরোয়ার্ড এই ইন্টারের। বার্সার জন্য খুব সহজও না আবার খুব কঠিনও হবেনা এই যাত্রাটা। ইনজাঘির ইন্টার ৩-৫-২ ফরমেশন ফলো করে থাকে, অন দ্য বলে সেটা ৩-২-৫ এবং এর মধ্যেও কিছু চেঞ্জেসের মাধ্যমে খেলা কন্টিনিউ করে আর অফ দ্য বলে ৫-৩-২/৫-৪-১ মিড ব্লক এবং যদি প্রয়োজন হয় তাহলে লো ব্লকও করে থাকে। 

 

ইন্টারের সবচেয়ে বড় অস্ত্র তাদের ডিফেন্স এবং দুই উইংব্যাক। দুই উইংব্যাকের পাশাপাশি দুইজন ওয়াইড সিবিও অপনেন্টের জন্য থ্রেটনিং। দুই উইংব্যাক হিসেবে ডিমার্কো/অগাস্তো, ডারমিয়ান/ডামফ্রিস আর এদিকে দুই ওয়াইড সিবি হিসেবে বাস্তোনি এবং প্যাভার্ড/বিস্যাক। ইন্টারকে আমি ডুয়েল উইনিং পাওয়ারহাউজ বলতে চাই, এই টিমের ডুয়েল উইনিং অ্যাবিলিটি অন্যদের থেকে জোশ। ইন্টারের কমপ্যাক্ট মিডফিল্ডের পার্ট হিসেবে মিড কন্ট্রোল করে চালহানোলু(ওয়ান অফ দ্য বেস্ট ইন হিজ পজিশন) , সাথে মিখতারিয়ান এবং একটু উপরের দিকে বারেল্লা দু’জনে বক্স টু বক্স রোল অপারেটর হিসেবে থাকে। বারেল্লা-মিখতারিয়ান হাফ স্পেসে রান মেকিং, সাপোর্ট দ্য উইংব্যাক, টেকিং পজিশন ইন জোন ১৪, ভার্টিক্যাল প্রেসিং, সেন্ট্রাল এরিয়ায় ওভারলোডিং এর মাধ্যমে নিউমেরিক্যাল সুপিরিয়রটি নেয়া এবং অপনেন্টের মিডফিল্ডকে স্ট্রেচ করিয়ে দুজন ফরোয়ার্ডের যেকোনো একজনের জন্য স্পেস ক্রিয়েট করে রান মেক করিয়ে চান্স ক্রিয়েশন করা। 

 

দুই ওয়াইড সিবি প্লেমেকারের জবও করে থাকে। ইনজাঘি তার দুই ওয়াইড সিবি বাস্তোনি-প্যাভার্ডকে/বিস্যাক সেই ফ্রীডম দিয়েছে অ্যাগ্রেসিভলি বল নিয়ে ক্যারি করার। এই বল ক্যারি অপনেন্টের প্রেস রেজিস্টেন্ট করে উইঙ্গারদের পেছনের ডায়াগনাল লেন ওপেন করে দেয়। ডিফেন্সে বাস্তোনি-প্যাভার্ড দের পজিশন টেকওভার করে দুই উইংব্যাক অথবা চালহানোলুরা। তবে ইন্টারের ডিফেন্সের ভালনারিবিলিটি কম। ইন্টারের দুই ফরোয়ার্ডের কানেক্টিভিটি বেশ ভালো, লাউতারো আবারও ফর্মে, তার সাথে মোটামুটি ফর্মে থাকা থুরামও আছে(খুব সম্ভমত প্রথম লেগ মিস করবে, সেক্ষেত্রে তারেমি অপশন হতে পারে)। লাউতারো লিংকআপ প্লে, ডিপে নেমে অপনেন্টের ডিফেন্স লাইন স্ট্রেচ করানো, স্ট্রেচ করিয়ে থুরাম অথবা উইংব্যাকদের জন্য স্পেস ক্রিয়েট করা, কুল হেডেড ড্রিবলিং, রানিং এন্ড ফিনিশিং এর মিশ্রণ। 

 

এতক্ষণ তো ইন্টারের প্লেয়িং স্টাইল নিয়ে জানলাম, এখন ফ্লিকের করণীয় বা কেমন হতে পারে বার্সার জবাব তা নিয়ে বলবো।

 

বার্সেলোনার হাই ডিফেন্সিভ লাইন মিনস্ অ্যাটাক মোর অ্যাটাক। বার্সার ফুলফিট একাদশ আশা করছি যেখানে বালদেকে দেখতে চাই ফার্স্ট লেগেই। ইন্টারের সাথে বার্সার পরীক্ষা হবে অ্যাটাক+কুইক ডিফেন্সিভ ট্রানজিশন নিয়ে। বার্সা ইন্টারের সেটাপ বিট করতে পারবে যদি প্রপার কোর্ডিনেশন থাকে। যেহেতু ইন্টার অতটা ফাস্ট মুভে খেলা খেলেনা, শুরুটা মিড ব্লকে করে থাকে সেখানে ইন্টারকে প্রেস করার সুযোগ দিতে হবে এবং সেখান থেকেই কুইক ট্রানজিশনে কাউন্টার প্রেস করে ইন্টারের ডিফেন্স লাইন, হাফ স্পেস কাজে লাগানো যেতে পারে। আর এখানেই দানি অলমোর প্রেজেন্স মূল্যবান। আতালান্টার সাথে (অলমোস্ট সিমিলার স্টাইল লাইক ইন্টার) অলমো ছিলোনা। সে ম্যাচে বার্সা আতালান্টার মিড ব্লক ভাঙতে অ্যাটাকে অলমোর অভাব স্পষ্ট ছিলো।

 

অলমো টিপিক্যাল বার্সেলোনা প্লেয়ার, যে কুইক পাস, টাইট পজিশন থেকে বল রিকোভার/পাসিং লেন বের করা, অ্যাটাকে ফ্লুইডিটি আনা, অ্যাটাকারদের সাথে গুড এনাফ কানেক্টিভিটি রয়েছে। ইন্টারের টাইট স্পেস আনলক করার জন্য অলমো মাস্ট ইনক্লুশন। বার্সা ফুলব্যাকদের দিয়ে ওয়াইড পজিশন থেকে বিল্ডআপ করিয়ে থাকে। সেক্ষেত্রে ইন্টারের ডিফেন্স হোরাইজন্টালি স্ট্রেচ করানো পসিবল, সেখানে কুন্দে-অলমো-লামিনের প্রেজেন্স গুরুত্বপূর্ণ। বায়ার্ন যেরকম লাইমার-মুলার-অলিস নিয়ে চেষ্টা করেছিলো। 

 

ইন্টার ফ্ল্যাঙ্ক পজিশনে বল রিকোভারিতে বেশ পটু, সেক্ষেত্রে বালদে, লামিনের কাজটা সবচেয়ে দরকারি এখানে। অন দ্য বলে বালদে এজ অ্য লেফট উইঙ্গার অপারেট করে, সেখানে বক্সে তিন ভিন্ন পজিশনে টেকওভার করে রাফা, লেওয়া, অলমো। বালদে যদি প্রথম লেগ মিস করে তাহলে সেটা বার্সার জন্য দুর্ভাগ্য। পাশাপাশি লেওয়াও মিস করবে তাও দুই লেগ, বাট স্টিল ফেরানকে ট্রাস্ট করা সম্ভব। লামিন নিয়ে একটু কম চিন্তিত, কারণ বিশ্বাস আছে ছেলেটা বিগ ম্যাচে স্টেপআপ করবে। আর বাস্তোনি-ডিমার্কোদের সাথে পুরণো অভিজ্ঞতা তো আছেই। 

 

বার্সার ডিফেন্স লাস্ট কিছু ম্যাচে বাজেভাবে এক্সপোজ হয়েছে। ইনডিভিজুয়াল এরর থেকে ফুল ডিফেন্স লাইনের এরর সব উপস্থিত। হাই-ডিফেন্সিভ লাইন মানে অলরেডি অপজিশনকে ফার্স্ট ফরোয়ার্ড এট্যাকের আমন্ত্রণ জানানো, সেখানে কুবারসি-ইনিগোর কাজ হবে লাউতারো-থুরাম এদের পারফেক্টলি মার্কড রাখা। বাট ডিফেন্সে একটা জিনিসের অভাব ফিল হবে সেটা হলো উইথ পেস রিকোভারি! যেটা একমাত্র আরাউহো ভালোমতো করতে পারবে বাট বিগ ম্যাচে আরাউহোর ব্লান্ডারের দিকে তাকায়ে হয়তো ওরে স্টার্ট করাবেনা বরং সিচুয়েশন ডিমান্ডে পরের দিকে সাব হিসেবে নামাবে। মিডের ফ্র্যাঙ্কি-পেদ্রীর কাজ জোন ১৪, হাফ স্পেসগুলা কভার আপ করা। কুন্দের কাজ হবে পারফেক্টলি ডিমার্কোকে টাইটের উপর রাখা, বালদে থাকলে লেফটে ডামফ্রিস/ডারমিয়ানকে মার্কডআপ করে রাখা। বালদে না থাকলে মার্টিনের উচিত হবে এট্যাকে খুব একটা এনগেজ না হয়ে ডিফেন্সিভ শেপের দিকে নজর রাখা। 

 

রাফার ডিফেন্সিভ ওয়ার্ক ইমপ্রেসিভ, বাট এট দ্য টাইম রাফা আমাদের বেস্ট কাউন্টার এট্যাকিং প্লেয়ার সে হিসেবে তাকে একটু হাই অফ দ্য পিচ থাকতে হবে যেন কুইক ট্রানজিশন থেকে কাউন্টারে গিয়ে ইন্টারের ডিফেন্সকে আনলক করা যায়। লেওয়ার অনুপস্থিতিতে ওর অফ দ্য বল মুভমেন্ট গুলা বার্সা মিস করবে৷ তবে লেওয়ার পজিশনে ফেরান আর নাম্বার টেনে যদি অলমো থাকে একটা এডভান্টেজ পাওয়া যাবে দুইজনই সুইচ করে করে বক্সে ঢুকতে পারবে, আনপ্রেডিক্টেবল এটাক হবে৷ লেওয়া, ফেরান দুজনের ই বেনিফিটও আছে আবার ডিমেরিটও আছে। 

 

আমি আগেও বলেছি এখনও বলছি, প্রপার কোর্ডিনেশন নিয়ে ইন্টারের সাথে আগানো লাগবে৷ ইন্টারের ডিফেন্সকে স্ট্রেচ, আনলক করার একটাই পথ যেটা বার্সা এবার করে দেখাচ্ছে কুইক কাউন্টার অ্যাটাক। কাউন্টার এট্যাকে ইন্টারের ডিফেন্স লাইন কমপ্যাক্ট থাকলেও মিডফিল্ডে হিউজ স্পেস পাওয়া যায়, সেই স্পেস বরাবর ওদের ডিফেন্স লাইন ড্রপ ডাউন করানো পসিবল। বার্সার এই সীজনের মিডল অফ দ্য পিচ কমপ্যাক্ট রাখার ট্যাকটিক্সটা এই ম্যাচেও সাক্সেস পাওয়া উচিত, কেননা ইন্টাররের বিল্ডআপে বাস্তোনি-প্যাভার্ড থেকে যেসব ডায়গনাল পাস, লং বল ইন্টারের দুই ফরোয়ার্ডকে খুজে বেড়ায় সেখানে বার্সা অফসাইড ট্র্যাপ, হাই প্রেশার দিয়ে কাউন্টার দিতে পারবে। বাট ইন্টারের ফিজিক্যালিটির সাথে বার্সার একটা ব্যাটল হবেই স্পেশালি মিডফিল্ডে যেটা লাস্ট ম্যাচে মাদ্রিদের সাথে দেখা গিয়েছিলো যেখানে বার্সার ৩টা মিড ই ফিজিক্যালি মোটামুটি বিট হয়েছে এবং পাশাপাশি লং বল গুলোর ক্ষেত্রেও। 

 

ফ্লিক যদি তার ডিফেন্সিভ হোমওয়ার্ক ভালোমতো করতে পারে, ফুলফিট একাদশ পায়, তাহলে ইউ নেভার নো! বাট ইন্টারকে হালকাভাবে নিবেনা ফ্লিক। ইন্টার স্মার্ট, পাওয়ারফুল, ডিসাইসিভ একটা দল। উচলের লাস্ট দুই ম্যাচে বায়ার্নের সাথে খুব একটা সুপিরিয়রিটি দেখাতে পারেনি বরং বায়ার্ন কোম্পানির কিছু ভুল, চান্স মিসের হিরিকে সুযোগ হাতছাড়া করেছে। বায়ার্নের হোমে ফার্স্টে লেগেই বায়ার্নের উচিত ছিলো ম্যাচটা কিল করা এবং টু মাচ পসিবল ছিলো, অলিস-কেইন যে পরিমাণ চান্স পেয়েছিলো বাট কনভার্ট করতে বা করাতে ফেইল হয়। 

 

বায়ার্ন, বার্সার প্লেয়িং স্টাইল অলমোস্ট সিমিলার। সেদিক থেকে কম্পেয়ার করলে বায়ার্ন লাস্ট দুই ম্যাচে যেভাবে খেলেছে (স্ট্যাটস+পারফরম্যান্স সবকিছু মিলিয়ে) বার্সাকেও তাই যেসব সমর্থকরা পিছিয়ে রাখছেন তাদের বলি পিছিয়ে রাখার সুযোগ নেই। ইন্টারকেও অবশ্যই ক্রেডিট দিতে হবে এতদূর আসার জন্য। তবে ইন্টারকে যেভাবে ওভারহাইপ দেয়া হচ্ছে এটা একটু বেশি বেশি! জাস্ট তিনটা প্লেয়ারের কথা বলবো চালহানোলু, ডিমার্কো,লাউতারো এদের আটকানো গেলে ম্যাচ বার্সার এবং আমি পার্সোনালি বার্সাকে নিয়ে অপটিমিস্টিক, প্রথম লেগেই বার্সা ম্যাচটা কিল করতে পারবে এটা আমার বোল্ড প্রেডিকশন (অনেকের কাছে বিষয়টা হাস্যকরও লাগতে পারে)! ইন্টারেস্টিং একটা ম্যাচআপ হতে যাচ্ছে। 

 

 

Leave a Comment