সান সিরোয় রোমাঞ্চকর ড্রয়ে ইন্টারের হাসি, বায়ার্নের বেদনা

ইউরোপিয়ান ফুটবলের মহারণে যখন সান সিরো স্টেডিয়ামে মুখোমুখি হয় দুই জায়ান্ট—ইন্টার মিলান ও বায়ার্ন মিউনিখ, তখন রোমাঞ্চ তো হবেই।

তবে এই ম্যাচ যে এতটা নাটকীয় হবে, তা হয়তো খুব কম ভক্তই কল্পনা করেছিলেন। শেষ পর্যন্ত ম্যাচটি ২-২ গোলে ড্র হলেও, উভয় দলের অনুভূতি ছিল সম্পূর্ণ বিপরীত। যেখানে ইন্টার মিলান মাঠ ছাড়ে আত্মতৃপ্তির হাসি নিয়ে, সেখানে বায়ার্ন মিউনিখকে ভুগতে হয় বেদনায়।

প্রথমার্ধ: আধিপত্য বায়ার্নের

ম্যাচের শুরু থেকেই দেখা গেছে বায়ার্নের আক্রমণাত্মক রূপ। জার্মান জায়ান্টরা বলের নিয়ন্ত্রণে ছিল অনেকটা সময়, এবং তাদের শর্ট পাসিং ও গতি ইন্টারের ডিফেন্সকে বারবার পরীক্ষায় ফেলেছে। ১৭ মিনিটে লেরয় সানের এক দারুণ থ্রু থেকে গোল করেন হ্যারি কেইন। সেই গোলে এগিয়ে যায় বায়ার্ন, এবং মনে হচ্ছিল তারা হয়তো বড় ব্যবধানে জিতে যাবে।

ইন্টার কিছুটা ধীরগতির হলেও ধীরে ধীরে ম্যাচে ফিরে আসে। মিডফিল্ডে বারেলা এবং চালহানওগ্লু-র নিয়ন্ত্রণ ম্যাচের ভারসাম্য আনে। প্রথমার্ধের শেষ মুহূর্তে কর্নার থেকে হেডে গোল করেন লওতারো মার্টিনেজ, এবং ইন্টার সমতায় ফিরে আসে।

দ্বিতীয়ার্ধ: নাটকীয় মোড়

দ্বিতীয়ার্ধে দুই দলই আক্রমণ-পাল্টা আক্রমণে ব্যস্ত হয়ে পড়ে। ম্যাচের ৬২ মিনিটে ফের এগিয়ে যায় বায়ার্ন, এবার গোল করেন জামাল মুসিয়ালা। দুর্দান্ত ফিনিশে আবারও ইন্টারকে চাপে ফেলে দেন তরুণ এই তারকা।

কিন্তু সান সিরোর গ্যালারি তখনো চুপ করে বসে নেই। ইন্টারও জানে, এই ম্যাচ ড্র করলেও তাদের সম্ভাবনা টিকে থাকবে। ম্যাচের ৮২ মিনিটে দুর্দান্ত কাউন্টার অ্যাটাকে গোল করেন মার্কো আরনাউটোভিচ। গ্যালারি উন্মাদনায় ফেটে পড়ে, আর স্কোরলাইন হয় ২-২।

শেষ মুহূর্তের নাটক

ম্যাচের শেষ দিকে দু’দলই চেষ্টা করেছিল জয়সূচক গোলের জন্য। বায়ার্নের থমাস মুলার একবার পোস্টে আঘাত করেন, আর ইন্টারের মার্টিনেজের শট অল্পের জন্য বাইরে চলে যায়। শেষ বাঁশি বাজার সঙ্গে সঙ্গে ইন্টার খেলোয়াড়রা একে অপরকে জড়িয়ে ধরেন, যেন ড্র-ই ছিল তাদের জন্য বিজয়ের সমান।

ইন্টারের হাসি কেন?

এই ড্র ইন্টারের জন্য গুরুত্বপূর্ণ এক অর্জন। গ্রুপের হিসেব অনুযায়ী এই পয়েন্ট তাদের নকআউটে যাওয়ার পথে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। তাছাড়া, ম্যাচের গতিপ্রবাহ অনুযায়ী দুইবার পিছিয়ে থেকেও ফিরে আসা দলীয় আত্মবিশ্বাসের জন্য দারুণ ইতিবাচক। এই ফলাফল কোচ সিমোনে ইনজাগির রণকৌশলেরও প্রশংসা এনে দিয়েছে।

বায়ার্নের বেদনা কোথায়?

দুইবার এগিয়ে থেকেও জয় তুলে নিতে না পারার হতাশা স্পষ্ট ছিল বায়ার্নের খেলোয়াড়দের মুখে। বিশেষ করে চ্যাম্পিয়নস লিগে যেখানে প্রতিটি পয়েন্ট মূল্যবান, সেখানে এমন ড্র কোচ থমাস টুখেলের পরিকল্পনায় কিছুটা আঘাতই বলা চলে। তাছাড়া, দ্বিতীয়ার্ধে কিছু ভুল সিদ্ধান্ত ও রক্ষণভাগের অদক্ষতা তাদের জয় থেকে বঞ্চিত করেছে।

সান সিরোর গ্যালারিতে যাঁরা উপস্থিত ছিলেন, তাঁরা নিঃসন্দেহে এক চমৎকার ফুটবল ম্যাচ উপভোগ করেছেন। দুই ইউরোপীয় জায়ান্টের এই লড়াই প্রমাণ করেছে, ফুটবলে কোনো ভবিষ্যদ্বাণী সহজ নয়। ইন্টারের লড়াকু মনোভাব এবং বায়ার্নের সামর্থ্য—উভয়ই চোখে পড়েছে। তবে ম্যাচ শেষে এক দল হাসি মুখে মাঠ ছাড়লেও, অন্য দলকে ভাবতে হচ্ছে—এই ড্র কি ভবিষ্যতে বড় কোনো মূল্য দিতে বাধ্য করবে?

Leave a Comment