দিগন্তজোড়া বনভূমির নিস্তব্ধতায় মাঝেমধ্যে ভাঙন ধরে। কোনো ঝোপ নড়ে ওঠে, বাতাস থমকে যায়, পাখিরা হঠাৎ চুপ। জলের ধারে নির্ভাবনায় দাঁড়িয়ে থাকা হরিণের চোখে তখনও ভয় ধরা পড়ে না। কিন্তু গাছের আড়ালে লুকিয়ে থাকা এক ক্ষুধার্ত চোখ জানে শুধু সময়ের অপেক্ষা। শিকার নিজেই ভুল করলে শিকারিকে আর কষ্ট করতে হয় না। একটা লাফ, একটা নিখুঁত আঘাত, আর তারপর বিজয়ী শিকারি সিংহ কিংবা বাঘ।
এমন নিঃশব্দ আগ্রাসনে নিপুণ শিকার আমরা অনেকবার দেখেছি ন্যাশনাল জিওগ্রাফি কিংবা ডিসকভারিতে। কিন্তু ২০১৩ সালের ২৪ এপ্রিল রাতে ইউরোপের ফুটবল মঞ্চে সেই দৃশ্য যেনো ধরা দিয়েছিল বাস্তব হয়ে।
সালটা ২০১৩, এপ্রিলের ২৪ তারিখ। চ্যাম্পিয়ন্স লিগের সেমিফাইনালের প্রথম লেগ। বরুশিয়া ডর্টমুন্ডের প্রতিপক্ষ রিয়াল মাদ্রিদ। বিশ্বজুড়ে কোটি চোখ টিভির পর্দায়। সবাই ভেবেছিল রোনালদোদের রূপকথাই হয়তো ছড়িয়ে পড়বে ইউরোপে। কিন্তু সেই রাতে বরুশিয়া ডর্টমুন্ডের হয়ে এক পোলিশ স্ট্রাইকার নিজেকে জানান দিয়েছিলেন লন্ডভন্ডস্কি নামে।
শুরু হয় ম্যাচ। ম্যাচের শুরুতেই বুঝিয়ে দিলেন তিনি ছায়া হয়ে থাকবেন না। মাত্র ৮ মিনিটেই প্রথম গোল। রিয়াল এরপর সমতায় ফিরলেও, দ্বিতীয়ার্ধে শুরু হয় আসল ধ্বংসযজ্ঞ। ৫০, ৫৫, আর ৬৬ মিনিটে টানা তিনটি গোল, হ্যাটট্রিক পূর্ণ করেই থামলেন না, চতুর্থবারের মতো বল পাঠালেন ক্যাসিয়াসের জালে।
চারটি গোল এবং চারটি নিখুঁত মুহূর্ত, যেখানে রামোস, পেপে কিংবা কোয়েন্ট্রাওরা ছিলেন কেবল অসহায় দর্শক। ম্যাচের হাইলাইটস দেখলেও বুঝবেন পুরো রিয়াল মাদ্রিদ একটি হরিণের পাল ছিল, আর লেওয়ানডস্কি ছিলেন একা এক সিংহ।
এই চার গোল চ্যাম্পিয়ন্স লিগের ইতিহাসে এক সেমিফাইনালে কোনো খেলোয়াড়ের সর্বোচ্চ গোলের রেকর্ড। হারের সাথে আত্মবিশ্বাসটাও দুমড়ে মুচড়ে দিয়ে মাদ্রিদকে আপ্যায়ন করেছিলো সেদিন লেওয়ানডস্কির ডর্টমুন্ড আর ফুটবল বিশ্ব পেয়েছিল এক নতুন গোলযন্ত্রকে।
লোকে বলে, “সেরা স্ট্রাইকারদের তালিকায় জায়গা পেতে হলে বড় ম্যাচে নিজেকে প্রমাণ করতে হয়।” সেই রাতে লেওয়ানডস্কি শুধু নিজেকে প্রমাণ করার পাশাপাশি নিজের নাম খোদাই করে উঠে এসেছিলেন ফুটবল ইতিহাসেই জায়গা করে নিতে।