রিকার্ডো কাকাকে ডিভোর্স দেওয়ার কারণ জিজ্ঞেস করলে তাঁর সাবেক স্ত্রী বলেছিলেন, “রিকার্ডো ( কাকা) আমার জন্য বেশি পারফেক্ট। তাই আমি তাঁকেগ ডিভোর্স দিয়েছি।”
কাকা কতদূর পার্ফেক্ট , তিনি নিজে ভালো জানেন কিন্তু ফুটবলে এরকম ক্যারেক্টার একটা প্রজন্মের জন্য ব্লেসিং ছিলো।
কাকার আবির্ভাব হয়েছিল ধূমকেতুর মতো। এসি মিলানের হয়ে সাইন করে যখন কাকা প্রথমবার ইতালিতে ল্যান্ড করেছিলো, তখন ইতালিয়ান মিডিয়ার আইডিয়াও ছিলোনা কাকা নিয়ে।
মিলানের তখনকার কোচ আনচেলত্তিও কাকার চেহারা দেখেননি। তাই সাংবাদিকদের “কাকা কে” প্রশ্নে তিনি চরম বিব্রত হচ্ছিলেন। কার্লো নিজেও কম কিউরিয়াস ছিলেন না কিন্তু। কাকা ইতালিতে ল্যান্ড করার দিন নিজেই এয়ারপোর্টে ছুটে গেলেন। এয়ারপোর্টে যা দেখলেন, তাঁর জন্য মেন্টাল প্রিপারেশন ছিলোনা তাঁর। মাথায় সিঁথি করা, চোখে চশমা, কমনীয় চেহারা – বলিষ্ঠ পৌরুষের ছাপ তার চেহারায় অনুপস্থিত।
কাকাকে প্রথমবার দেখে ভ্রু কুঁচকে কার্লো, বললেন ” ওহ গড, আমরা তো একটা ইউনিভার্সিটি স্টুডেন্টের পেছনে ইনভেস্ট করেছি!” প্রথম ট্রেনিং সেশনে কাকাকে পোক করার জন্য কার্লো জিজ্ঞেস করেছিলেন ,” আচ্ছা, তুমি কি তোমার বাবা মাকে জানিয়ে আসনি এখানে আসার আগে? তোমার স্কুল টিচাররা কিছু বলবে না তো?
এরপর প্রথম ট্রেনিং সেশনে কাকা যে খেল দেখিয়েছিল, তাঁতে কার্লোর চোখ ছানাবড়া! ক্ষ্যাপাটে গাত্তুসো কাকাকে ওয়েলকাম ট্যাকল করতে গেলে কাকা বুঝতে পেরে ১৮০° টার্ন নিয়ে নেয়। হতবাক গাত্তুসো ” ফা* অফ” বলে নতুন সাইনিংকে অ্যাপ্রুভাল জানায়।
নিজের টাইমিং আর পজিশনিং এর জন্য আলেসান্দ্রো নেস্তা ইতালিতে তখন গড টায়ারের ডিফেন্ডার, কিন্তু কাকা ৩০ গজের এক ডিফেন্সচেরা পাসে গ্রেট নেস্তাকে ধরাশায়ী করেছিলো
ব্রাজিলের সম্ভ্রান্ত পরিবারে জন্ম তাঁর, বাবা ডাক্তার – মা শিক্ষিকা। ফুটবল আর পাঁচটা ব্রজিলিয়ানের মতো তাঁর কাছে অর্থ উপার্জনের পথ ছিলোনা কখনো। কাকা ফুটবলটা খেলতেন ভালবেসে। ভয়াবহ এক সুইমিং পুল অ্যাক্সিডেন্টে মৃত্যুর খুব কাছাকাছি গিয়ে ফিরে এসেছিলেন। তাই ফুটবলের মাধ্যমে জীবনের প্রত্যেকটা সুন্দর মুহূর্তকে চেরিশ করতে চাইতেন। প্রতিবার গোল করে মনে করতেন সেই স্রষ্টাকে, যিনি তাঁকে নতুন জীবন দিয়েছিলেন।
বল পায়ে মোহনীয় সাম্বার নৃত্য , অদৃশ্য জাদুবলে বুটজোড়ার সাথে বলকে চিপকে রাখা, অ্যাক্সিলারেশন বার্স্ট দিয়ে গোলের দিকে সটান ছুটে চলা , বাঘা বাঘা গোলকিপারদের বোকা বানানো আর সবশেষে শূন্যে দুহাত তুলে উদযাপন করা – এই মানুষটা গোটা একটা প্রজন্মকে শিখিয়েছিলেন ফুটবলকে ভালবাসতে। ম্যারাডোনার পর কিংবা কিংবা মেসির মেসি হয়ে ওঠার আগে এমন আবেদনময়ী ফুটবলার আর আসেনি।
কাকা ওয়াস গিফ্টেড, স্পেশাল। ইউরোপে নিজের প্রথম সিজনেই লেজেন্ডারি পর্তুগীজ মিডফিল্ডার রুই কস্তাকে বেঞ্চ করেছিলেন, সেরি আ বর্ষসেরা খেলোয়াড় নির্বাচিত হয়েছিলেন মাত্র ২২ বছর বয়সেই।
বিশ্বমঞ্চে মেসি – রোনালদোর এক যুগের ডমিনেশন পিরিয়ড শুরুর আগে শেষ ব্যালন ডি অর জেতা খেলোয়াড় ছিলেন কাকা। অ্যাটাকিং মিডফিল্ডার হয়ে ২০০৬/০৭ সিজনে চ্যাম্পিয়ন্স লিগের সর্বোচ্চ গোলদাতা হয়েছিলেন ১০ গোল করে। সেমিতে, ফাইনালে গোল পেয়েছিলেন।
সেমিতে হেড করে বল রিসিভ করে হেইঞ্জে, ফ্লেচারকে কাটিয়ে আবার এভ্রা – ফ্লেচারের মাঝে দিয়ে আবার হেড করে বল সরিয়ে দৃপ্তপায়ে দৌঁড়ে গিয়ে ভ্যান ডার সারকে পরাস্ত করে দেওয়া গোল চ্যাম্পিয়ন্স লীগ ইতিহাসের সবচেয়ে আইকনিক গোলগুলোর একটা।
ফাইনালেও গোল করেছিলেন, এথেন্সে লিভারপুলকে পরাস্ত করে বদলা নিলেন দুই বছর আগের “মিরাকল অফ ইস্তাম্বুল” এর। গোল করার পরে ” I belong to Jesus” লেখা টিশার্ট পড়ে শূন্যে হাত উচিয়ে ঈশ্বরকে ইঙ্গিত করার দৃশ্যটা কেই বা ভুলতে পারবে!
যোগ্য দাবিদার হিসেবেই ব্যালন ডি অর জিতলেন ওইবার।
মিলানের সাথে সম্পর্কে ভাটা পড়েনি কোনোদিন , তাই ইচ্ছার বিরুদ্ধে গিয়েও ভালবাসার ক্লাবকে বাঁচাতে মিলন ছেড়ে মাদ্রিদের গিয়েছিলেন। সেখানে চোটের সাথে লড়েছেন প্রতিনিয়ত। ত্রিশের আগে ফুরিয়ে যাওয়ার আক্ষেপটা চিরকালের। পার্টিবয় ছিলেন না , রেগুলার চার্চ গোয়ার। অনিয়ন্ত্রিত জীবনযাপন করতেন না টিপিক্যাল ব্রাজিলিয়ানদের মতো, যশ – প্রতিপত্তি তাঁর মাথা নষ্ট করে দেয়নি। তবুও সৃষ্টিকর্তা বারবার তার পরীক্ষা নিয়েছিলেন।
জাতীয় দলের জার্সিতে বিশ্বকাপ জিতেছেন কিন্তু তারকাখচিত স্কোয়াডে ২০ মিনিট সময় তার কি – ই বা করার ছিল? মেইনম্যান হয়ে ২০১০ এ গিয়েছিলেন বিশ্বকাপে কিন্তু তাকে সঙ্গ দেয়ার মতো যোগ্য কেউ ছিলনা। ২০১৪ বিশ্বকাপের আগেই ফুরিয়ে গেলেন। ফিট থাকলে হয়তো ইতিহাসটা ভিন্ন হতো, নেইমার – অস্কারদের সাথে কাকাকে দেখতাম একবার। একটা প্রজন্মে সীমাবদ্ধ না হয়ে সর্বকালের সেরাদের কাতারেই থাকতেন কাকা, অর্জনের তালিকাটা আরো বড় হতো।
সবাই তো সেরা হতে আসেন না, তবুও স্মরণীয় হয়ে থেকে যান।
Some people just make you feel good. kaka was one of those guys. An Icon, an ambassador of the beautiful game!
শুভ জন্মদিন, ফুটবলের প্রথম ভালবাসা।
Author – Muhammed Hasibul Islam Jihad