জন্মদিনের আগে ‘১০০ ভাগ সাফল্যের’ যে রেকর্ড ধরে রাখলেন মেসি

আজ ২৪ জুন, ২০২৫। ফুটবল ইতিহাসের অন্যতম সেরা নাম লিওনেল আন্দ্রেস মেসি আজ পা দিলেন ৩৮ বছরে। জন্মদিনের আগে দিনটি মেসির জন্য ছিল একেবারে বিশেষ—কারণ তাঁর দল ইন্টার মায়ামি ক্লাব বিশ্বকাপের শেষ ষোলো নিশ্চিত করেছে।

তবে শুধু শেষ ষোলোতে ওঠাই নয়, এই ম্যাচের মধ্য দিয়ে আরও একটি অমূল্য রেকর্ড নিজের করে নিয়েছেন আর্জেন্টাইন মহাতারকা

🌍৩৩টি গ্রুপ পর্ব, কখনো বিদায় নয়!

মেসির ২১ বছরের দীর্ঘ পেশাদার ক্যারিয়ারে জাতীয় দল এবং ক্লাব মিলিয়ে মোট ৩৩ বার তিনি বিভিন্ন টুর্নামেন্টে অংশ নিয়েছেন, যেখানে গ্রুপ পর্ব ছিল বাধা হিসেবে। অবাক করা ব্যাপার হচ্ছে, একবারও তাঁর দল গ্রুপ পর্বেই থেমে যায়নি! প্রতিবারই কোনো না কোনোভাবে মেসির দল পৌঁছে গেছে পরের রাউন্ডে। ফুটবলে এমন ধারাবাহিকতা এক কথায় অভাবনীয়।

⚽ইন্টার মায়ামির ম্যাচ: নাটকীয় ড্র, তবুও শেষ ষোলো

২০২৫ সালের ক্লাব বিশ্বকাপে যুক্তরাষ্ট্রের ক্লাব ইন্টার মায়ামির হয়ে খেলছেন মেসি। গ্রুপ ‘এ’-এর শেষ ম্যাচে তারা মুখোমুখি হয় ব্রাজিলিয়ান জায়ান্ট পালমেইরাসের সঙ্গে। বাংলাদেশ সময় ভোরে হওয়া ম্যাচে প্রথমার্ধেই ২-০ গোলে এগিয়ে যায় মায়ামি। কিন্তু দ্বিতীয়ার্ধে দুর্দান্ত প্রত্যাবর্তন করে পালমেইরাস, ম্যাচটি শেষ পর্যন্ত ২-২ গোলে ড্র হয়।

এই ড্রয়ের পরও মায়ামি গ্রুপ রানার্সআপ হিসেবে শেষ ষোলো নিশ্চিত করে। গ্রুপ ‘এ’ চ্যাম্পিয়ন হয় পালমেইরাস। আর শেষ ষোলোয় মেসিদের প্রতিপক্ষ ইউরোপিয়ান চ্যাম্পিয়ন পিএসজি—মেসিরই সাবেক ক্লাব।

📊মেসির পরিসংখ্যান: চমকপ্রদ ধারাবাহিকতা

ফুটবল পরিসংখ্যানভিত্তিক এক্স অ্যাকাউন্ট “মিস্টারচিপস”-এর তথ্য অনুযায়ী, মেসি যেসব টুর্নামেন্টে অংশ নিয়েছেন এবং গ্রুপ পর্ব সফলভাবে অতিক্রম করেছেন, সেগুলো নিচে তুলে ধরা হলো:

🏆 টুর্নামেন্ট ✅ গ্রুপ পার হওয়া বার
UEFA চ্যাম্পিয়নস লিগ ১৯ বার
FIFA বিশ্বকাপ ৫ বার
কোপা আমেরিকা ৭ বার
ক্লাব বিশ্বকাপ ১ বার
লিগ কাপ (ইন্টার মায়ামি) ১ বার

 

এই তালিকায় অন্য কোনো ফুটবলার নেই, যিনি এতবার গ্রুপ পর্বে খেলেছেন এবং প্রতিবারই টিকে থেকেছেন। এটাই দেখায়, বড় মঞ্চে চাপ সামলে দলকে সামনের দিকে টেনে নেওয়ার ক্ষেত্রে মেসির সামর্থ্য কতটা অনন্য।

🆚রোনালদোর সঙ্গে তুলনা: পিছিয়ে পড়লেন ক্রিস্টিয়ানো

মেসির সবচেয়ে বড় প্রতিদ্বন্দ্বী ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো নিজেও সফল এক ক্যারিয়ারের অধিকারী। তবে এই পরিসংখ্যানে তিনি পিছিয়ে। ২০১৪ সালের ব্রাজিল বিশ্বকাপে রোনালদোর নেতৃত্বাধীন পর্তুগাল দল গ্রুপ পর্ব থেকেই বিদায় নেয়। ফলে শতভাগ গ্রুপ সফলতা আর রোনালদোর ক্যারিয়ারে নেই।

এটা মেসির জন্য বাড়তি সম্মানের বিষয়, কারণ এই তুলনাটা ফুটবলপ্রেমীদের মনেও দীর্ঘদিন থাকবে।

🎯মেসির রেকর্ডের তাৎপর্য

এই রেকর্ড শুধু পরিসংখ্যানেই সীমাবদ্ধ নয়, বরং এটি মেসির মানসিক দৃঢ়তা, দলের জন্য প্রতিশ্রুতি এবং ধারাবাহিক সাফল্যের প্রতীক। বড় ম্যাচে নিজের পারফরম্যান্সের মাধ্যমে পুরো দলের আত্মবিশ্বাস বাড়ানো এবং নিজেদের লক্ষ্যে পৌঁছে দেওয়ার ক্ষেত্রে মেসি নিজেই একটা সম্পদ।

মেসি
পালমেইরাসের বিপক্ষে ম্যাচের একটি মুহূর্তে মেসি . এএফপি

বিশ্বকাপ, কোপা, চ্যাম্পিয়নস লিগ বা ক্লাব বিশ্বকাপ—প্রতিটি টুর্নামেন্টে মেসি যেন নিশ্চিত করেন, দল যেন অন্তত গ্রুপ পর্ব পার করে। এটি তাঁর নেতৃত্বগুণ এবং প্রতিযোগিতার গভীর বোঝাপড়ার প্রমাণ।

🏁আগামী চ্যালেঞ্জ: পিএসজি

শেষ ষোলোতে ইন্টার মায়ামির সামনে অপেক্ষা করছে পিএসজি—মেসির পুরোনো ক্লাব। এই ম্যাচটিও মেসির ক্যারিয়ারে গুরুত্বপূর্ণ হতে চলেছে। একদিকে বয়সের ভারে ক্লান্তি, অন্যদিকে নিজের জন্মদিনে দলকে আরেক ধাপে তুলতে না পারার চাপ—সব মিলিয়ে এক রোমাঞ্চকর লড়াইয়ের অপেক্ষা করছে ফুটবলপ্রেমীরা।

৩৮ বছর বয়সে এসেও যখন একজন ফুটবলার এমন রেকর্ড গড়ে যাচ্ছেন, তখন বুঝে নিতে হয়—তিনি সত্যিই সময়কে হার মানানো এক কিংবদন্তি। লিওনেল মেসির গ্রুপ পারফরম্যান্সের এই ধারাবাহিকতা তাঁকে ইতিহাসের পাতায় নতুনভাবে লিখে দিয়েছে।

আজকের দিনে তাঁর জন্মদিনের শুভেচ্ছার সঙ্গে সঙ্গে কুর্নিশ জানাতেই হয় সেই ক্যারিয়ারকে, যেখানে প্রতিবারই তিনি প্রমাণ করেছেন—“গ্রুপ পর্বে মেসির দল কখনো হারে না।”

1 thought on “জন্মদিনের আগে ‘১০০ ভাগ সাফল্যের’ যে রেকর্ড ধরে রাখলেন মেসি”

Leave a Comment